ঢাকা,মঙ্গলবার, ৭ মে ২০২৪

মদিনায় মার্কেট ঘেরাও করে গণগ্রেফতার, উদ্বিগ্ন প্রবাসী বাংলাদেশীরা

মোহাম্মদ মামুনুর রশিদ, মদিনা থেকে :: সৌদিআরবের পবিত্র মদিনা নগরীতে বাংলাদেশীদের গণগ্রেপ্তার করা হয়েছে। মার্কেট ঘেরাও করে যাকে পেয়েছে তাকে ধরে নিয়ে গেছে দেশটির পুলিশ বাহিনী। বাদ যায়নি পবিত্র হারাম শরীফে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়া লোকজনও। আকামা তথা ওয়ার্ক পারমিট থাকা সত্ত্বেও ছাড় দেয়া হয়নি কাউকে। এমনকি কোন কবিলের আবেদনও পাত্তা দেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আটক হওয়া বাংলাদেশিরা বর্তমান মদিনার কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। গত চারদিন ধরে এক পোষাকেই কারাবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এতেকরে তাদের স্বজন ও প্রবাসী ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে মদিনা মসজিদুল-হারামের ১৮ নম্বর গেটের (মূল গেইট নং ২১) সামনের মার্কেট ‘তাইয়্যিবা কমার্শিয়াল সেন্টারে’ এই গণগ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়। শুধু ওই মার্কেট থেকে প্রায় ১০০ জন দোকান মালিক, কর্মচারী, ক্রেতা, পথচারীকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় বলে প্রবাসীরা জানিয়েছে।

তাইয়্যিবা কমার্শিয়াল সেন্টারে ২০ বছরের অধিক সময় ধরে দোকান করছেন নোয়াখালীর শাহ আলম। গণগ্রেপ্তার থেকে তিনি বাদ যাননি। কোন অভিযোগ না থাকার পরও তিনি এখন কারাবন্দি। দীর্ঘ বছরের প্রবাস জীবনের সহায়-সম্বল ও ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান শূন্য ফেলে রেখে শাহ আলমকে ফেরত পাঠাবে সৌদি সরকার।
তাইয়্যিবা কমার্শিয়াল সেন্টারের আলসাফা আবায়া নামক দোকানের মালিক, কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডী নতুন মহলের বাসিন্দা মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন মুঠোফোনে চকরিয়া নিউজ ডটকম কে জানান, আকামা তথা ওয়ার্ক পারমিটসহ সমস্ত বৈধ কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশী প্রবাসীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে সৌদি পুলিশ। পুরো মদিনা নগরীতে এখন গ্রেফতার আতঙ্ক চলছে। গণগ্রেফতারের ভয়ে প্রবাসীরা বাসা থেকে বের হচ্ছে না। তিনি জানান, গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে আকস্মিক তাদের মার্কেট ঘিরে অন্তত ৭০ জনকে আটক করা হয়। সেখানে তার ছোট ভাই এরশাদুল হক, তকির ওসমানী, দোকানের কর্মচারী নুরুল আবছারও রয়েছে। যাদের সবারই ওয়ার্ক পারমিট আপটুডেট আছে। প্রবাসে আদৌ থাকা যাবে কিনা? তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।
মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন দুঃখের সাথে জানান, আটককৃতদের মধ্যে সবেমাত্র দেশের জায়গাজমি বিক্রি করে বিদেশে এসেছে এমন লোকও রয়েছে। অনেকে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পবিত্র হারাম শরীফে ফজরের নামাজ পড়তে গিয়ে আটক হয়ে এখন জেলে বন্দি। হজ করতে আসা স্বজনদের সাথে শেষবারের মতো কেনাকাটা করতে গিয়ে রেহাই পায়নি পুলিশের হাত থেকে। সবার ঠিকানা এখন মদিনার কারাগার। যেকোনো সময় তাদের দেশে ফেরত পাঠাবে সৌদি সরকার।
প্রবাসীরা জানিয়েছে, আটকের সংবাদ শুনে তাদের কবিলরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে নিজেদের জিম্মায় অন্তত পাঁচ দিনের জামিন চেয়েছে। কিন্তু সৌদি কর্তৃপক্ষ কোনো আবেদন শুনেনি। কারাগারে কারো সাথে দেখা করতে দেয়া হয়নি। বরং সবাইকে ‘এক্সিট’ বা ফেরত লাগিয়ে দেয়া হয়েছে।

পাঠকের মতামত: